মোবাইল বা ট্যাব নিয়ে আপনার শিশু কিছু দেখছে বা গেইম খেলছে। আপনি হয়তো খাওয়ার জন্য ডাকছেন। একটু পর তাকে যখন ডাকতে গেলেন,তার আগ্রহ বা মনোযোগ দেখে মনে মনে ভাবলেন আর ১০ মিনিট সময় দিই। ১০ মিনিট পর আবার যখন মোবাইলটা রাখতে বললেন তারপরও আপনার শিশু মোবাইলটা খুশিমনে রাখলো না। আপনি ব্যাপারটা নিয়ে প্রচন্ড বিরক্ত হলেন,রাগ করলেন আর মনে মনে ভাবছেন অতিরিক্ত ১০ মিনিট দেয়ার পরও কেন আপনার শিশু খুশি না?

এই ব্যাপারটা নিয়ে আপনি একাই ভুগছেন তা কিন্তু না। একটি টার্ম আছে Screan Dependency  নামে। এবং সারা বিশ্বের অনেক গবেষকই কাজ করে যাচ্ছেন গত ২-৩ দশক ধরে।

প্রথমে বলি এই স্ক্রিনটাইম (Screen Time) ব্যাপারটা নিয়ে সায়েন্স কি বলছে?

মনে করুন আপনি বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা দেখছেন। দুই দলের কেউই গোল দেয়নি। খেলার ৮০ মিনিট পার হয়েছে এমন সময় টিভিটা অফ হয়ে গেল। আর অনই হচ্ছে না।

এমন চরম উত্তেজনার মুহুর্তে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সময় লাগে। এটা তো বড়দের কথা বলছি আমি। ছোটদের আরও বেশি কষ্ট হয়।

কেন এমন হয় তা নিয়ে Isabelle Filliozat বলেছেনঃ

“যখন কোনও মানুষ (শুধু শিশু নয়) এমন Screen Time এ থাকে তখন সে পুরোপুরিভাবে অন্য দুনিয়াতে চলে যায়। তখন আমরা অনেক ভালো অনুভব করি। এত অন্যরকম লাগে যে ওটা ছেড়ে অন্য কিছুই করতে ইচ্ছে করে না।

এই সময় আমাদের ব্রেইনেdopamine এর উৎপাদন বেড়ে যায়। Dopamine এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার যা মুলত আমাদের দুঃখ-যন্ত্রণা বা স্ট্রেস কমানোর জন্য কাজ করে। তাই একে “FEEL-GOOD HORMONE” ও বলা হয়।

সবকিছু একইভাবে চলতে থাকে বা এই Dopamine একই লেভেলে থাকে যতক্ষন না স্ক্রিন-টাইম শেষ হচ্ছে। তাই যখনই এই স্ক্রিন-টাইম শেষ হচ্ছে সাথে সাথেই এই dopamine এর লেভেল হঠাৎ করেই নেমে যায় এমনকি অনেক সময় শরীরে ভিন্ন রকমের ব্যাথাও হয়।

তাই আপনি যতই আপনার শিশুকে বুঝিয়ে বলছেন তোমার মোবাইল দেখার সময় ৩০মিনিট তাতে খুব একটা কাজ করবেনা। Dopamine এর কারনে তার সময় কিভাবে যাচ্ছে তা মাথায় থাকবেইনা উল্টো যত সময় দিবেন ততই সে বাড়াতে চাইবে। এবার হয়তো আপনি ভাবছেন - তবে আমি কি করবো?

#উপায়?

শিশুর সাথে সেতুবন্ধন বা bridge তৈরি করুন ঐ মুহুর্তটিতে ।

চলুন কিভাবে সেতুবন্ধন তৈরি করবেন তা জানি। যখনই আপনি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবার স্ক্রিন থেকে আপনার শিশুকে সরাবেন। তখনই তার পাশে বসে যান। ৫ মিনিট আগে বসলেই হবে। টিভি অথবা মোবাইল-ট্যাব যা নিয়েই থাকুকনা কেন আপনি একটু বসুন। বসে জিজ্ঞেস করুন সে কি দেখছে? যদি গেইম খেলতে থাকে তবে জিজ্ঞেস করুন কোন লেভেলে আছে? কি কি হয় গেইমটাতে? উপরের লেভেলে যেতে আরও কি করতে হবে।

শিশুরা অনেক পছন্দ করে তার নিজের সবকিছু নিয়ে বাবা-মার সাথে শেয়ার করতে। কিন্তু অতিরিক্ত মনোযোগের কারনে হয়তো উত্তর দিতে চাইবেনা। হাল ছাড়বেন না। আরও কথা বলতে থাকুন। যখন উত্তর দেয়া শুরু করবে তখন বুঝবেন কাজ হচ্ছে।

এবার আপনি আপনার আলোচনা শুরু করতে পারেন। তার খাওয়ার বা গোসলের সময় হয়েছে তা আপনি জানাতে পারেন। এতটুকু মনোযোগ পেলে আপনার শিশু হয়তো নিযে থেকেই টিভি/মোবাইল/ট্যাব বন্ধ করে উঠে যাবে।

সবসমই এই কাজ smooth হবে এমন কোনও কথা নেই। বিভিন্ন শিশুর জন্য এই উপায় বিভিন্ন হবে। তবে স্ক্রিন থেকে উঠানোর জন্য অবশ্যই কিছু সময় দিতে হবে এবং বিভিন্ন কথা বলার মাধ্যমে তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে হআর এভাবেই আপনি আপনার শিশুর সাথে আস্তে আস্তে সেতুবন্ধন তৈরির মাধ্যমে স্ক্রিন থেকে বের করে নিয়ে আসতে পারেন।