শিশুর খাওয়া-দাওয়া নিয়ে মায়ের চিন্তার শেষ নেই৷ একরত্তি হলে কী হবে, কোন খাবার যে মুখে তুলবে তা রীতিমতো গবেষণার বিষয়৷ এদিকে আবার অল্প একটু খেয়ে, না খেতে চাওয়ার অভ্যেসও আছে অনেক শিশুর৷ সে কারণেই অনেক মা বাচ্চাকে জোর করে খাওয়াতে চান৷ কিন্তু তাতে ফল হয় বিপরীত৷ হাবিজাবি খাওয়ানোর ফলে বাচ্চা নয় ওবেসিটিতে আক্রান্ত হয়, বা স্বাস্থ্যবান বাচ্চাও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে৷ তাই শুধু খাওয়ালেই হবে না, বাচ্চার খাওয়া-দাওয়া নিয়ে রীতিমতো সচেতন থাকা উচিত৷ পরামর্শ দিচ্ছেন ডাঃচাইল্ড ওবেসিটি

রোগা চেহারা মানে বাচ্চা সঠিক পুষ্টি পাচ্ছে না, গোলগাল হলে তবে তার স্বাস্থ্য ঠিকঠাক, এ ধারণা আসলে ভুল৷ বরং মোটাসোটা বাচ্চারাই ‘চাইল্ড ওবেসিটি’তে আক্রান্ত৷ ছোটবেলায় বয়সের তুলনায় অতিরিক্ত মোটা হলে বড় হয়ে হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস, স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেকটাই বেড়ে যায়৷ তাই সন্তানের যত্ন নিন ঠিকই, কিন্তু বেশি খাইয়ে মোটা করবেন না৷

অপরিমিত খাওয়ালেই যে বাচ্চা মোটা হবে তা সবসময় ঠিক নয়৷ হাইপো থাইরয়েড, ডিপ্রেশন হলেও অনেক সময় বাচ্চা বেশি খেয়ে ফেলে৷ কিংবা রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা অ্যালার্জির ওষুধেও থাকতে পারে শিশুদেরস্বাভাবিক বৃ‌দ্ধি হচ্ছে কিনা কিভাবে বুঝবেন?

বাচ্চার কোন বয়সে কত ওজন বা উচ্চতা হওয়া উচিত তার জন্য এই সহজ হিসেব জেনে রাখা ভাল৷ বয়সের প্রেক্ষিতে স্বাভাবিক ওজন জানতে বয়সের সঙ্গে ৪ যোগ করে যোগফলকে ২ দিয়ে গুণ করুন৷ অর্থাৎ কারও বয়স ৩ হলে তার ওজন হওয়া উচিত ১৪ কেজি৷

প্রথম বছরে সাধারণত বাচ্চার উচ্চতা ৭৫ সেণ্টিমিটার বাড়ে৷ চার বছরের বাচ্চার প্রতি বছরে উচ্চতা বাড়ে ১০০ সেণ্টিমিটার করে৷ চার থেকে দশ বছর বয়সিদের বছরে আনুমানিক বৃ‌দ্ধি ৫-১০ সেণ্শিশুর খাওয়া-দাওয়া

** শিশুর বয়স ছ’মাস হলে খিচুড়ি, আলুসিদ্ধ, আলুভাজা, দই, পায়েস খাওয়ানো উচিত৷ দশ মাস বয়স থেকে ফাইবারযুক্ত খাবার, ডালসিদ্ধ, ডিমের কুসুম আর এক বছর পার করলে মাছ খাওয়ানো ভাল৷ ১ বছর ৩ মাস থেকে মুরগির মাংসের ছোট টুকরো ও আর একটু বড় হলে অল্প পাঁঠার মাংস দেওয়া যায়৷

** বাচ্চার দেড় বছর বয়স হলে দিনে চারবার খাওয়ানো উচিত৷ ছোট বলে তেলমশলা ছাড়া খাবার দিতে হবে এমন কোনও ব্যাপার নয়৷ বরং এতে খাবারের প্রতি বাচ্চার বিতৃষ্ণা জন্মায়৷ বড়রা যেমন স্বাদু খাবার খেতে পছন্দ করে ছোটরাও ঠিক তেমনই৷ সমীক্ষা বলছে, ঝাল বাদে বাকি সব মশলা এমনকী সরষের তেল দিয়েও রান্না করা ভাল৷

** বাচ্চারা রোজ মাছ খেতে পারে৷ পাশাপাশি মাছ-মাংস-ডিম ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বাচ্চাকে খাওয়ালে ভাল ফল মেলে৷ মাছের ক্ষেত্রে সামুদ্রিক মাছ পমফ্রেট, ইলিশ, আমোদিনী, কাজরী মাছ খাওয়ানো ভাল৷ মুরগির মাংস রোজ অল্প করে দেওয়া যায়৷ যদি বেশি ক্যালোরি বার্ন করার সুযোগ না পায় তাহলে তিন-চারদিন অন্তর ডিম খাওয়ানো উচিত৷ বাচ্চার ওবেসিটি থাকলে ডিমের হলুদ অংশ বর্জন করাই ভাল৷

** রোজ ভাত, ডাল, রুটি, মরশুমি সবজি, একটা গোটা বা কয়েকরকমের ফলের টুকরো খাওয়াতে হবে৷ ভিটামিন, অ্যাণ্টি অক্সিডেণ্ট সমৃদ্ধ ফল, আপেল, কলা, লেবু নিয়মিত ও লুচি-পরোটা, চাউমিন দু-একদিন দেওয়া যেতেই পারে৷

** টিফিনে রুটি, মুড়ি, চিঁড়েভাজা দেওয়া ভাল৷ কিন্তু বন্ধুদের সামনে রুটি, মুড়ি খেতে অনেক শিশু হীনমন্যতায় ভোগে৷ তাই ছোট থেকেই তাকে এগুলির গুণ যে ম্যাগি, বার্গার, কেকের তুলনায় অনেক বেশি তা বোঝাতে হবে৷ তবে বাইরের সব খাবার বারণ এমন নয়৷ মাঝেমাঅভ্যাস বদল

** বাচ্চার খাওয়ার সময় টিভি চালু রাখবেন না।

** ফাস্টফুড বাদ, এতে ক্যালোরি বাড়ে৷

** হেলথ ড্রিঙ্কস যে কোনও বাচ্চার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর৷

** লিকুইড খাবার না দিয়ে চিবিয়ে খেতে হয় এমন খাবার উপকারী৷

** রোগাকে মোটা করতে চাইবেন না

সন্তান রোগা হলে অনেক সময় বাবা-মা তাকে স্বাস্থ্যবান করানোর জন্য বেশি করে মাখন-ঘি, ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়াতে উঠেপড়ে লাগেন৷ কিন্তু ভিটামিন খাইয়ে কখনওই মোটা করা যায় না৷ সপ্তাহে দু-তিনদিন এক চামচ ঘি দেওয়া যেতে পারে৷ তবে এসব বেশি দিলে রোগা বাচ্চারও কোলেস্টেরল বাড়ে৷ যদিও কেলেস্টেরলযুক্ত খাবার একদম বাদ দিলে শরীরে হরমোন তৈরি হয় না৷

তবে কোনওভাবেই খাওয়া নিয়ে বাচ্চাকে জোর করা উচিত নয়৷ এতে খাবারের প্রতি ভীতি জন্মায়, বিপত্তি বাড়ে৷ বাচ্চার খিদে পেলে তবেই খাওয়ানো শ্রেয়৷ তাতে যতটুকু খায় সেটাই ভাল৷এছাড়া, বাচ্চারা বেশি করে খেলাধুলো করলে ক্যালোরি বার্ন হয়ে ঠিক সময় খিদে পাবে, খাবেও পরিমাণমতো৷